২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে কলেজটির অধ্যক্ষ জনাব আবদুল হক পাটোয়ারী স্যারের লিখা প্রবন্ধটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

১৮৯০ সালের পূর্বে ও তলাটে শিক্ষা প্রসারের কোনও ব্যবস্থা ছিল না । হাতেগােনা দু একটা অভিজাত বাড়িতে প্যাজাগােজি পদ্ধতিতে শিশু – কিশোরকে অক্ষর দান করা হত মাত্র । এ রকম দুটি প্যাগােজি শিক্ষার বৈঠকখানা ছিল জাহাপুরের নন্দী বাড়ি ও নাহা বাড়িতে । এর অল্প কিছুকাল পর ১৮৯০ সালের দিকে জমিদারী রায়ত প্রয়াত কৃষ্ণ দাস বৈরাগী তার আঙ্গিনায় একটি পাঠশালা চালু করে । সে সময় গাংগাটিয়া গ্রামে একটা ইউ , পি স্কুল চালু হয় । রামদয়াল দে ছিলেন সেই স্কুলের একজন শিক্ষক । রামদয়ালকে জাহাপুর নিয়ে আসেন এবং তার তত্ত্বাবধানে তার বাড়ির সামনের চত্বরে একটা ইউ , পি , স্কুল স্থাপন করেন । জয় বছর পরই এই ইউ.পি স্কুল এমভি , স্কুলে উন্নীত হয় । এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির উন্নতিতে সাহায্য ও পরামর্শের হাত প্রসারিত করে এগিয়ে আসেন , গিরীশ চন্দ্র রায়ের বংশধর অপর দু’জমিদার আনন্দ মােহন রায় এবং তার জ্ঞাতিভ্রাতা রাজচন্দ্র রায় । তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সহযােগিতায় ১৮৯৯ সালে এম.ভি , স্কুলটি এম.ই স্কুলের মর্যাদায় উন্নীত হয় ।

বাবু গিরীশ চন্দ্র রায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদায় উন্নীত করতে অশী ভূমিকা পালন করেন । পরামর্শ ও সহসােগিতার হাত প্রসারিত করে দিলেন আনন্দ মােহন রায় এবং রাজ চন্দ্র রায় । অবশেষে ১৯১৪ সালে এম.ই.স্কুলের স্থাপনাতেই গিরীশ চন্দ্র রায়ের বাবার নাম অনুসারে জাহাপুর কমলাকান্ত একাডেমী নামে মাধ্যমিক স্কুলের যাত্রা শুরু হল । এ অবস্থার উন্নতির জন্য ১৯১৬ সালে বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি যে স্থানে অবস্থিত সে স্থানেই ইংরেজী ই – আকারের একটি অপরূপ সুন্দর বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হল এবং সে বছরই জমিদার সামনের আঙ্গিনায় এম , ই স্কুলের অবস্থান থেকে বর্তমান স্থানে জাহাপুর কমলাকান্ত একাডেমী স্থানান্তর করা হয় ।

জাহাপুর কে কে একাডেমী হতে অধ্যয়ন শেষে এক পর্যায়ে ১৯৫৮ সনে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের পদ অলংকৃত করেন জনাব বজলুর রহমান ভূঞা । তার প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান ও সার্বিক উন্নয়ন ছিল স্মরণীয় । ষাটের দশকে সাইক্লোনে যখন প্রতিষ্ঠানটি একেবারে নিশ্চিহ্ন তখন তিনি প্রাক্তন ছাত্র ও বিভিন্ন মহলের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়ে দ্বিতল ভবনের নির্মানসহ যাবতীয় প্রারম্ভিক সামগ্রী ব্যবস্থা করেন । শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চাহিদা আলােকে প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস তুলে ধরেন । Book let on Jahapur KK Academey মাধমে। পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে শিক্ষা বিষয়ক এক সম্মেলনের তদানীন্তন শিক্ষা মন্ত্রী এবং মুরাদনগরের এম এন এ যােগ দেন । এম এন এ সাহেব উক্ত বুকলেট এর কয়েকটি দিক আলােকপাত করে তা সেথায় উপস্থাপন করেন । প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান তার ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধান শিক্ষক জনাব বজলুর রহমান ভূঞা বি , এ , বিটিকে ১০০০ / = টাকা সম্মানী প্রদানের ঘােষনা দেন ; যা ছিল অত্র প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গৌরবময় অধ্যায় ।

প্রধান শিক্ষক জনাৰ বজলুর রহমান ভূঞা আকস্মিক অসুস্থ্যতায় নিপতিত হয়ে শয্যাশয়ী অবস্থায় স্কুলের প্রতি লেখা অবিস্মরণীয় চিঠি প্রতিষ্ঠানের প্রতি তার অকৃত্রিম দরদের বিষয়টি প্রকাশ পায় । চিঠিটি এখনও অফিস কক্ষে টানানাে রয়েছে । তবে পরের দিন ২৭ শে জুলাই ১৯৭০ সনে তিনি অকাল মৃত্যুতে ঢলে পলে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অনেকের ইচ্ছায় প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে তাকে দাফন করা হয় । ( স্কুল পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক রেজুলেশনের মাধ্যমে ) ; যা ছিল তার সফলতা ও অমরত্বের নিদর্শন ।

১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে মাধ্যমিক শাখা হইতে উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় উন্নীত হয় । তখন হইতেই একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান , বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগে ছাত্র – ছাত্রী ভর্তি শুরু হয় । উচ্চ মাধ্যমিক শাখা খােলার জন্য প্রাক্তন ছাত্র – ছাত্রীগণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং প্রায় এক বছর উক্ত শাখার যাবতীয় খরচের সিংহভাগ ব্যয় ভার করেন । শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় উন্নীত হওয়ার পর ১৪/৩/৯৭ খ্রি . ১১ সদস্য বিশিষ্ট প্রথম পরিচালনা কমিটি জনাব এস.এ , কে , এম শফিকের নেতৃত্বে গঠিত হয় । এম.পি.ও ভুক্তির ব্যাপারে জনাব শাহ মােফাজ্জল হােসাইন ( কায়কোবাদ ) এম.পি , সার্বিক সহযােগিতা করেছেন । ব্যাপক উন্নয়ন ও সংস্কারের ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে ছাত্র – ছাত্রীদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পায় । শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের ব্যাপক কর্মসুচীর আওতায় ডাবল সিফট প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি অন্তর্ভুক্ত হয় । ১৯৯৬-৯৭ সালে পুরাতন মূল দ্বি – তল ভবনের সংস্কার ও মেরামতের কাজ সম্পূর্ণ করা হয় । ১৯৯৮-১৯৯৯ অর্থ বছরে প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের চাহিদা সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য সভাপতি মহােদয় ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও তাহার নিজস্ব তহবিল হতে ৩.৫০ লক্ষ টাকার বেশি অর্থ ব্যয়ে মজবুত ও মান সম্মত সীমানা প্রাচীর নির্মাণ হয় ।


৯ ই এপ্রিল ২০০৪ সালে পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের একজন উর্ধতন নীতিনির্ধারক এবং গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়ােজিত একজন মাননীয় মন্ত্রী , মহান জাতীয় সংসদের সম্মানিত সংসদ সদস্য এবং একজন অভিজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ সচিবের উপস্থিতিতে একটি মনােরম ও জাকজমকপূর্ণ পুরস্কার বিতরণী সভা অনুষ্ঠিত হয় । উক্ত অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়ােজিত মাননীয় সাবেক মন্ত্রী ডঃ খন্দকার মােশারফ হােসনে প্রতিনিধি এবং মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শাহ কাজী মােফাজ্জল হােসাইন ( কায়কোবাদ ) ও ভূমি সচিব জনাব আজাদ রুহুল আমিন যথাক্রমে বিশেষ অতিথি ও সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন । ২০০৪-০৫ অর্থ বছরে ফ্যাসিলিটিজ বিভাগের আওতায় ২১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সকল সুবিধাদিসহ দ্বিতল একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয় । ( সংকলিত স্মরণিকা ২০০৩ ও ২০০৫ )

২০০৮ সালে এস , এস , সি তে শতভাগ পাশ সহ কুমিল্লা বাের্ডে ৬ ষ্ঠ স্থান অর্জন ২০০৯ সালে ৯৮ % , ২০১০ সালে ১৯ এভাবে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এস , এস , সি তে শতকরা ৯৬ ভাগের বেশী ছেলে মেয়ে পাশ করে । অনুরূপভাবে ২০০৮ ও ২০০১ সালে এইচ , এস , সি তে | ভাল ফলাফল করায় বাের্ডের সেরা ২০ এ অভিনন্দিত হয়েছে । বরাবরই জাহাপুর কে.কে. একাডেমী ও কলেজ ২০১৪ সাল পর্যন্ত এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি তে ভাল ফলাফল করায় বাের্ডের সেরা ২০ এ অভিনন্দিত হয়েছে । বরাবরই জাহাপুর কে.কে একাডেমী ও কলেজ ২০১৪ সাল পর্যন্ত এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি তে মুরাদনগর উপজেলার ১ ম ও ২ য় স্থানে ছিল ।

বর্তমান সরকারের মিশন ২০২১ জাতিসংঘ ঘােষিত টেকসই উন্নয়নে লক্ষ্যমাত্রা অর্জণ ২০৩০ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সােনার বাংলা ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সুশিক্ষার মাধ্যমে সুনাগরিক ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে সকল শিক্ষক , শিক্ষার্থী ও কর্মচারীগণ অঙ্গীকারবদ্ধ । মান সভাপতি শ্রী প্রবীর কুমার সাহার স্বল্প সময়ের নেতৃত্বে পুরাে প্রতিষ্ঠা দৃশ্যপঠ পরিবর্তন হয়ে যায় । প্রতিষ্ঠান নতুন সাজে সজ্জিত হয় । তার উৎসাহ উদ্দীপনায় শত বৎসর উৎসব নতুন মাত্রায় প্রাণ পায় ।

এই তথ্যটি প্রদান করেছেন মুরাদনগর উপজেলা’র জাহাপুর ইউনিয়নের জাহাপুর কমলাকান্ত একাডেমী ও কলেজের অধ্যক্ষ জনাব আবদুল হক পাটোয়ারী।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *